আন্তর্জাতিক বাউল শিল্পী শ্রী গনেশ বাউল
গনেশ ঘোষ থেকে
শ্রী গনেশ বাউল হয়ে ওঠার গল্প
১৯৮৬ শালের ১লা এপ্রিল বিশিষ্ট কীর্তন শিল্পী শ্রী বাবুলাল ঘোষ ও মমতাময়ী শ্রীমতি কাননবালা ঘোষের অষ্টমগর্ভজাত কনিষ্ঠ সন্তান শ্রী গনেশ ঘোষ হুগলী জেলার রিষড়া অঞ্চলে জন্মগ্রহন করেছিলেন ।। জন্ম লগ্ন থেকেই অভাব অনটনে চলতে থাকে জীবন। দারিদ্রতা তাকে বেঁধে রাখতে পারেনি দুরন্ত স্বভাবের ছোট্টো গনেশ মা কাননবালা দেবীর উষ্ণ ভালোবাসার স্পর্শে একটু একটু করে সরল মনে বেড়ে উঠতে থাকেন অতিসাধারণ ভাবে। দিন যায় মাস কাটে বছর পেড়িয়ে আসে নতুন বছর ছোট্ট গনেশ ভালোবাসা, সহিষ্ণুতা, বাস্তব জীবনের কাঠিন্য কে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে যায় সবুজময় হকির মাঠে । হকির স্টিক কিশোর গনেশর পরিচিত হয়ে ওঠে। জাতীয় স্তরে পৌঁছে যায় হকির স্টিক হাতে । মাঠে মাঠে তখন নিত্য স্বপ্নের ফেরি কাধে গনেশ ঘোষ । কিন্তু কথায় বলেনা শিকড়ের এক টান আছে সকলের সেই টান অগ্রাহ্য করা অসম্ভব । সনামধন্য বৈষ্ণব ও কীর্তন শিল্পী পিতার থেকে সুর ও তালের প্রাথমিক ভালোবাসার বীজ দান বাধতে শুরু করে গনেশ ঘোষ জীবনে, তাই কখনো তবলার বোলে অথবা বাংলার ঢাকের কাঠিতে থাকেন হকির মাঠ কাঁপিয়ে বেড়ানো সেই ছেলেটা। সুর তাল লয়ের সাথে পিতা বাবুলাল ঘোষর সঙ্গীতানুরাগ গনেশ ঘোষের জীবনে এনে দেয় সঙ্গীত চর্চা আর কালের পথ ধরে সরকারি প্রশাসন বিভাগের চাকরিকে বিনা দ্বিধায় ত্যাগ করে আপন করে নেন সদগুরু কে। হটাৎ যেনো জীবন পথের পরিবর্তন ঘটে রিষড়ার দামাল ছেলে গনেশ ঘোষের জীবনে ,সময় এবং পিতার থেকে পাওয়া সঙ্গীতানুরাগ ও মায়ের থেকে শেখা সহিষ্ণুতা তরুন গনেশ কে পৌঁছে দেয় গুরু বাউল সম্রাট শ্রী পূর্ণদাস বাউলের সান্নিধ্যে । গুরু পূর্ণদাসের থেকে লাভ করেন গুরু মন্ত্র । হকির মাঠে ছুটে বেড়ানো সেই দুরন্ত গনেশ হয়ে ওঠেন শান্ত চিত্তর , আজো তার বিচরন মাঠে ঘাটে তবে সেই হকির স্টিক রূপ নিয়েছে বাউলের একতারার, তাঁর দোতারার তান দেশ পেড়িয়ে বিদেশে। একলা পথে , আনমনে কিংবা বহুজনের মাঝে খমক বাজিয়ে বাউল মনের আবেগ প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক বাউল শিল্পী শ্রী গনেশ বাউল ।
বিশিষ্ট বক্তারা
গুরু প্রাপ্তি
সবে তখন তারুন্যের আমেজ রিষড়ার ঘোষ দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তানের । হকির মাঠে ছুটে বেড়ানো কিছুটা স্থিমিত, বরং এখন গনেশ ঘোষের হৃদয়ে অনাবিল সুখ আসে তবলার লহরাতে, তালে আর বোলে মত্ত সেই যুবক। দিকে দিকে অনুষ্ঠানে ডাক পরে তার । এই ভাবেই রিষড়ার পরের স্টেশন শ্রীরামপুরের এক বাদক বাসিন্দার মারফত তরুণ গনেশ পৌঁছে যায় বাউল সম্রাট পূর্ণদাস বাউলের কাছে । যুবক গনেশের তবলার ঠেকা বাউল সম্রাটের মনে স্নেহের ছন্দ তৈরি করে, তার সাথে গুরু শিষ্যের পথচলা শুরু হয়। অবশেষে সনামধন্য কীর্তন শিল্পী পিতা শ্রী বাবুলাল ঘোষ ও মমতাময়ী মাতা শ্রীমতি কাননবালা ঘোষের অনুমতি নিয়ে বাউল সম্রাট পূর্ণদাস বাউলের কাছে 'মন্ত্রে'- দীক্ষা নেন গনেশ ঘোষ । তারপর গুরুর সাথে দেশ বিদেশের সান্নিধ্য লাভ করে যুবক গনেশ । চলিত পথে গনেশ তবলিয়া থেকে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে বাউল সঙ্গীত শিল্পী। গুরুর আদর্শকে শিরধার্য্য করে আজো নিজের শৈল্পিক সত্ত্বাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে সেই তরুণ গনেশ কালের পথ পড়িয়ে গনেশ ঘোষ আজ হয়ে উঠেছে গনেশ বাউল ।।।
স্বজন হারানোর যন্ত্রনা
যশ, অর্থ, সম্মান ও প্রতিপত্তি প্রয়োজন অনুযায়ী সবটাই এখন গনেশ বাউলের ঝুলিতে, গনেশ বাউলের জীবনে হটাৎ ঘনালো কালোমেঘের আনাগোনা শোক এসে ঘিরে ফেললো গনেশ বাউল কে হটাৎ করেই বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ছোট্ট গনেশ সবে উপার্জন করেছে কিছুটা ক্ষ্যতি ও সম্মান ঠিক সেই সময়ই মায়ের আচলটা হাড়িয়ে গেলো। মায়ের নয়নের মনি ছিলেন কনিষ্ঠ পুত্র গনেশ । মা কে হাড়িয়ে বড়োই শোকগ্রস্ত হয়ে পড়লেন গনেশ বাউল, সময়র পথে হেটে নিজেকে একটু সামলাতে না সমলাতেই আবারো হাড়িয়ে ফেলললেন বাবা শ্রী বাবুলাল ঘোষকে। গনেশ বাউল জীবনে অনেক কিছু পেলেও বাবা মা কে হাড়িয়ে নিঃশ্ব হয়ে পড়লেন গনেশ বাবু। স্বজন হারানোর যন্ত্রনা বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে যন্ত্রনা কে উপসম করে ফেললেন ।।।
সহযোগী





মানুষ মানুষের জন্য
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব । আর এই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে এবং চলার পথে সাফল্য ও উন্নতির জন্য সার্বিক ভাবে প্রয়োজন 'অর্থ' যদিও গনেশ বাউলের কাছে অর্থের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিল্প তবুও যখন চরম দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করতে হয়েছিল সেই সময় গনেশ বাউলের পাসে এসে দাঁড়ান রিষড়ারই অপর এক বাসিন্দা শ্রী কালাচাঁদ কুন্ডু মহাশয়। পেশার দিক থেকে তিনি একজন 'ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, দেশ বিদেশের নামি দামি সংস্থাতে তিনি যুক্ত ছিলেন । কালাচাঁদ বাবু তরুণ গনেশ কে দিয়েছিলেন আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হয়ে ওঠার পরামর্শ । সেই পরামর্শই সৃষ্টি করেছিল GHOSH ENTERPRISE এর। এই Ghosh Enterprise গনেশ বাউলের মনের যে সেবামূলক ইচ্ছে যেমন অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো সেই সব ইচ্ছে কে বলবৎ করতে সাহায্য করে। শ্রী কালাচাঁদ কুন্ডু বাবুর সাহচার্যে গনেশ বাউলের জীবনের অন্ধকারাচ্ছন্ন দারিদ্র্যতা ধীরে ধীরে আর্থিক স্বচ্ছলতায় আলোকিত হতে থাকে ।।।